লুকায়িত পাঠক্রম৷ (Hidden Curriculum)
লুকায়িত পাঠক্রম৷ (Hidden Curriculum)
লুকায়িত পাঠক্রম হলো এক বিশেষ ধরনের পাঠক্রম যা অপ্রথাগত এবং রাজ্য, জেলা, বিদ্যালয় বোর্ডের দ্বারা লিখিত নয় এবং বিদ্যালয়ের শিক্ষক দ্বারা অপ্রত্যক্ষভাবে শিক্ষার্থীরা শিখতে থাকে। লুকায়িত পাঠ্যক্রম শব্দটিতে লুকায়িত ব্যবহারের কারণ এটি সাধারণ শিক্ষার্থী শিক্ষাবিদ এবং বৃহত্তর সম্প্রদায়ের কাছে এটি অব্যক্ত বা অজ্ঞাত থাকে।
মিচেল হেরালামবসের মতে, শিক্ষার্থী লুকায়িত পাঠক্রম এর দ্বারা সেই সমস্ত বিষয় বস্তু ও শেখে যা বিদ্যালয় উদ্দেশ্যের মধ্যে পড়ে না কিন্তু বিদ্যালয়ের উপস্থিতির মাধ্যমে শিখে যায়।
যেমন বিদ্যালয় কোন শিশু আসবার পর শিক্ষককে গুড মর্নিং বলা, নিজের জায়গায় বসা, শিক্ষক শ্রেণীকক্ষে প্রবেশ করলে উঠে দাঁড়ানো,শিক্ষক প্রশ্ন করলে উঠে দাঁড়িয়ে বলা,একসাথে না বলে হাত তোলা, ক্লাস থেকে বেরিয়ে গেলে উঠে দাঁড়ানো এই সমস্ত।
লুকায়িত পাঠক্রম টি প্রথাগত পাঠক্রমের পাঠকে শক্তিশালী করতে পারে অথবা দুর্বলও করতে পারে।
লুকায়িত পাঠক্রমের বৈশিষ্ট্যঃঃ
১) এটি অলিখিত।
২) এটি অপ্রথাগত (Informal)
৩) শিক্ষক ও সঙ্গীদের দ্বারা অপ্রত্যক্ষভাবে সঞ্চালিত হয়।
৪) বাঞ্ছিত ও অবাঞ্ছিত উদ্দেশ্য প্রাপ্তি ঘটে।
৫) সাধারন পাঠক্রমের পাশাপাশি এটি সঞ্চালিত হয়।
৬) স্থান বিশেষে লুকায়িত পাঠক্রম পরিবর্তন ঘটে।
৭) এই পাঠক্রমের কোনো মূল্যায়ন হয় না।
৮) এই পাঠক্রম শিশুর প্রাথমিক স্তর থেকেই শুরু হয়ে যায়।
৯) পাঠটিকায় (Lesson plan) উল্লেখ করা যায় না।
১০) এর দ্বারা বিশ্বাস ও মূল্যবোধ সঞ্চালন ঘটে
লুকায়িত পাঠক্রমে লিঙ্গগত পক্ষপাতিত্বের উদাহরণ-
১. মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের অধিক পরিশ্রমের কাজ দেওয়া হয়।
২.ছেলেদের তুলনায় মেয়েদেরকে কোমল স্বভাবের ভাবা হয়।
৩.ব্যায়াম করানোর সময় ছেলেদের ও মেয়েদের ভিন্ন ভিন্ন ব্যায়াম করানো হয়।
৪.শ্রেনীকক্ষের একদিকে মেয়েরা বসে আর একদিকে ছেলেরা বসে।
৫. অধিক দায়িত্বপূর্ন কাজ মেয়েদের না দিয়ে ছেলেদের দেওয়া হয়।
৬.প্রার্থনায় আদেশ দেওয়ার সময় ছেলেদের কে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
কোথাও লিখিত থাকে না, তবু্ও স্কুলে এগুলি হয়ে থাকে,তাই এগুলো লুকায়িত পাঠক্রম এর মধ্যে পড়ে।
বাতিল পাঠক্রম হলো যা বিদ্যালয়ে শেখানো হয় না। কখনো কখনো শিক্ষক ইচ্ছাকৃতভাবে বা নিজের অজান্তে পাঠক্রমের বিষয়বস্তু উপেক্ষা করেন। শিক্ষক বিষয়টি গুরুত্বহীন ভেবে ও অপেক্ষা করতে পারেন। যদিও বাতিল পাঠক্রমের জন্য খুব বেশি প্রভাব পড়ে না।
আবার প্রথাগত পাঠক্রমে সংস্কৃতির সকল দিক পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত করা ও সম্ভব হয় না।ওই অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কে উপেক্ষা করে পাঠক্রম রচনা করা হয় থাকে একেও বাতিল পাঠক্রমের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
সুবিধা ও অসুবিধাঃ
সুবিধাঃ
১)লুকায়িত পাঠক্রম ছাত্রদের ভবিষ্যৎ জীবন প্রস্তুতির সহায়ক
২) লুকায়িত পাঠক্রম দ্বারা শিক্ষকের পাঠদান সুবিধা হয়
৩) লুকায়িত পাঠক্রম নমনীয় তাই খুব সহজেই পরিবর্তন করা যায়।
অসুবিধাঃ
১) লুকায়িত পাঠক্রম কোনো নির্দিষ্ট নিয়মকানুন দ্বারা সজ্ঞায়িত নয়।
২) লুকায়িত পাঠক্রম সঞ্চালিত করার জন্য আদর্শ শিক্ষকের প্রয়োজন।
৩) বিভিন্ন সামাজিক প্রেক্ষাপট থেকে আসা শিক্ষার্থীর মধ্যে অবাঞ্ছিত কিছু বিষয় শিক্ষার্থীর মধ্যে সঞ্চালিত হয়।
Comments
Post a Comment